শহীদুজ্জামান
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট জ্ঞান ও তথ্যের একটি প্রধান উৎস হয়ে ওঠার পাশাপাশি যোগাযোগ এবং চিন্তা ও অনুভূতি প্রকাশের অন্যতম কার্যকর পন্থা হয়ে উঠেছে। এটি প্রতিটি নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মানুষ ক্রমশ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
ইন্টারনেট মানুষের যোগাযোগ পদ্ধতি ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের চর্চায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। পাশাপাশি এটি মানুষের মৌলিক অধিকারের সঙ্গেও সম্পর্কিত। ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার তর্কসাপেক্ষে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের (ইউডিএইচআর) অনুচ্ছেদ ১৯ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (আইসিসিপিআর) বিধিবদ্ধ। জাতিসংঘের মতে, ইন্টারনেট থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা হলে এই অধিকারগুলোর লঙ্ঘন হয় এবং তা আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে যায়।
সুতরাং, ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ বা বাধা আরোপ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে এখন অবধি অনেক দেশ নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, জনসাধারণের কণ্ঠস্বর এবং অভিব্যক্তিকে বাধা দেওয়ার জন্য কিছু দেশ এখনও কঠোরভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং কখনও কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে।
মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করতে অনলাইন স্বাধীনতা রক্ষায় ২০১২ সালে একটি অনলাইন ইন্টারনেট স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত বেশ কয়েকটি সংস্থা ও ব্যক্তি ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। এটি নীচের পাঁচটি মৌলিক নীতিকে সমর্থন করে;
- সেন্সরশিপমুক্ত ইন্টারনেট
- দ্রুত ও সাশ্রয়ী নেটওয়ার্কগুলোতে সবার প্রবেশাধিকার
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়া, যোগাযোগ করা, তৈরি করা ও উদ্ভাবন করার স্বাধীনতা
- নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবকদের জন্য সুরক্ষা, বিশেষ করে যাদের উদ্ভাবন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অপব্যবহার করেন এবং
- গোপনীয়তার অধিকার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের যেসব তথ্যব্যবহার করা হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাদের হাতে থাকা।
অনলাইন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা ইন্টারনেটের ভবিষ্যতের জন্য একটি ঘোষণার প্রস্তাব করে। প্রস্তাবে বলা হয়, ঘোষণা এবং এর নির্দেশক নীতিমালা সরকারি নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, সিএসও ও নাগরিকদের জন্য একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন অংশীদার এই ঘোষণাকে সমর্থন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রাষ্ট্র এবং আরও অনেক দেশ এটি অনুসরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বিশেষজ্ঞ, সিএসও ও মানবাধিকার রক্ষাকারীরা সবার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণায় প্রতিফলিত গণতান্ত্রিক নীতি, মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে শক্তিশালী করতে এই ধরনের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা বিশ্বব্যাপী স্বাধীন ইন্টারনেটের জন্য একটি ঘোষণার ওই আহ্বানকে স্বাগত জানান, যা মানবাধিকার রক্ষা করে এবং সর্বজনীন সংযোগ, গোপনীয়তা, নিরাপত্তা সুরক্ষা এবং বহু-অংশীজনের শাসনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে।
যদিও ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের জন্য ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারীরা কিছু কর্তৃত্ববাদী সরকার দ্বারা ইন্টারনেটের স্বাধীনতায় বাধা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ডিজিটাল উপকরণের ব্যবহার, সাইবার-আক্রমণের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, অবৈধ আধেয় (কনটেন্ট) ও মিথ্যা তথ্যের বিস্তার এবং অর্থনৈতিক শক্তির ব্যাপক কেন্দ্রীকরণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরাও একই মত তুলে ধরেন। তারা বলেন যে, ডিজিটাল প্রযুক্তির মধ্যে যোগাযোগ, গণতন্ত্র, শান্তি, আইনের শাসন ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে, যদি মানুষ কোনো কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অযাচিত সীমাবদ্ধতা ছাড়াই ওইসব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট ডিজিটাল অধিকার কর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। কিছু দেশ মানুষকে তাদের মনের কথা বলা থেকে বিরত রাখতে, স্বাধীন সংবাদের ওয়েবসাইট ব্লক করতে, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে, মিথ্যা তথ্য ছড়াতে এবং তাদের নাগরিকদের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।’’
‘‘ঘোষণাপত্রটি ঢালাও ডিজিটাল নজরদারি সম্পর্কে কথা বলে না, যা যুক্তরাষ্ট সরকার এবং তার ‘ফাইভ আইস’ অংশীদাররা প্রথম করেছিল। এটি প্রোফাইলিং ও উপাত্ত সংগ্রহ, যা বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ব্যবসায়িক মডেলের অংশ এবং যা তাদের ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে, সে সম্পর্কেও কিছু বলে না’’- বলেন তিনি।
জীবনের সব পর্যায়ে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহার ডিজিটাল যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো কীভাবে কাজ করে এবং একত্রিত হয় সে বিষয়টিকে প্রভাবিত করে। এগুলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তুলে ধরে, বিশেষ করে আইন প্রণয়নে। সময় ও স্থান ভেদে আইন ও নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট আন্তঃসীমান্তীয়, যেখানে কিছু বাধা রয়েছে।
জনাব লেনিন বলেন, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত বিষয়ে হামলা প্রতিরোধের পাশাপাশি সমস্যা এড়াতে এবং ইন্টারনেটের ইতিবাচক প্রভাবকে শক্তিশালী করতে মিথস্ক্রিয়া বা যোগাযোগের এক ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তেলা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অন্য দেশের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো এক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত:
১. বেসরকারি ও সরকারি আইন প্রযোজ্য, তাই ইন্টারনেট বিষয়ক প্রবিধানগুলো প্রায়ই জটিল। সেগুলো গোপনীয়তার অধিকারকে অস্পষ্ট করে।
২. যেহেতু নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার বা নির্মাণ-কৌশল আন্তঃসীমান্তীয় এবং বেশিরভাগ প্রবিধান আন্তর্জাতিক, তাই কেউ নিজেকে জাতীয় আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে পারে না।
৩. বেসরকারি খাতের প্রবিধানগুলো আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ইন্টারনেট আইনে শিথিল নিয়মগুলোর অস্তিত্বকে আগে থেকেই নির্ধারণ করে, যা নিয়মের সাধারণ বাধ্যবাধকতা ও “রাষ্ট্রীয় উৎস”-এর ওপর ভিত্তি করে আইনের উৎসগুলোর চিরাচরিত শ্রেণিবিন্যাসকে প্রভাবিত করে।
৪. ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করা আইনি উৎসের বৈচিত্র্যতার জন্য পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক বিধিগুলোর সমাধানে প্রয়োজন আইনের সংঘাত। ইন্টারনেট একটি অনন্য অবকাঠামো যা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
বাংলাদেশে সিএসও এবং অধিকার-ভিত্তিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু অগ্রগতি খুবই কম এবং ইন্টারনেট এখনও স্বাধীন নয় অথবা আংশিক মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর আন্তর্জাতিক স্কোর যতটা সম্ভব কম থাকে। ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতায় বাংলাদেশ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৪৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে, এটি আগের বছরের চেয়ে তিন পয়েন্ট বেশি, যা নির্দেশ করে যে দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতা আংশিক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাহিল বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আই্ন (ডিএসএ) অনলাইন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ এবং মানহানি, ভুয়া খবর ও ঘৃণামূলক বক্তব্যসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে; যদিও আইনটি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে করা। তবে কিছু সমালোচক যুক্তি দেন যে, এটি বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘন করে এবং ভিন্নমতকে দমন করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষকে তাদের ডিজিটাল অধিকার প্রয়োগে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এই সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে সামান্যই, বিশেষ করে যখন মুক্তচিন্তকদের এই আইনের আওতায় বিচার করা হয়।’
কর্তৃপক্ষ প্রায়ই অনলাইনে সরকার, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনাকারীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে, যা অনলাইনে সেলফ-সেন্সরশিপকে উসকে দেয়। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নজরদারি সরঞ্জামের পেছনে ব্যয় করে যাচ্ছে এবং কঠোর আইন ব্যবহার করছে, যার কারণে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উপাত্ত অপব্যবহার হওয়ার আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে। কর্মকর্তারা অনলাইন কনটেন্ট সেন্সর করার জন্য তাদের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ও আইনি কর্তৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এই আইনের সুবিধা দেওয়ার জন্য জনাব সাহিল জনগণকে বাকস্বাধীনতা অনুশীলনে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সংবেদনশীল করার ওপর জোর দেন। তার মতে, যতক্ষণ না প্রতিটি নাগরিক তাদের দায়িত্ব ও নৈতিকতাজনিত উদ্বেগ সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝতে পারেন ততক্ষণন ওই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২৪.০৮ মিলিয়ন। কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে মূলত দূর থেকে পড়াশোনা ও কাজের কারণে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ও তরুণ জনগোষ্ঠী। এই ব্যবহারকারীদের কাছে ইন্টারনেট বেশ উপকারী মনে হয়েছে এবং তারা ইন্টারনেট ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছে।
এটি উল্লেখ যে, তিন বছর অবনমনের পর বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতার অবস্থা গত বছর উন্নত হয়েছে। ‘ফ্রিডম হাউসের’ ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২২ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনলাইনে যুক্ত হতে কম বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয়েছেন। এতে আরও বলা হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতায় বাংলাদেশ ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৪৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে, এটি আগের বছরের চেয়ে তিন পয়েন্ট বেশি, যা নির্দেশ করে যে দেশটি আংশিকভাবে ইন্টারনেট স্বাধীনতা উপভোগ করছে।
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক বা নীতিমালা নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের বিশ্বাস হলো, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইন্টারনেটের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। এটি স্বাধীন গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করে এবং দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা করে। সুতরাং, এটি লক্ষ্য করা উচিত যে, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে যে কোনো অননুমোদিত বিধিনিষেধের অর্থ হচ্ছে দেশের উন্নয়নে বাধা দেওয়া এবং তা মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
লেখক: সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নিউজ নেটওয়ার্ক